Surfe.be - Banner advertising service

Saturday, March 21, 2020

রায়পুরে করোনা থেকে মুক্তি পেতে বিপুল জমায়েত!


রায়পুরে করোনা থেকে মুক্তি পেতে বিপুল জমায়েত!
এমন গণজমায়েতেই লক্ষ্মীপুরের রায়পুরায় করোনা থেকে মুক্তি পেতে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। ছবি : কালের কণ্ঠ

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুসারে ৫০ জনের বেশি মানুষের জমায়েত নিষিদ্ধ। সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারও গণজমায়েত নিষিদ্ধ করেছে। এই নির্দেশনা অমান্য করে স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার হায়দরগঞ্জে গতকাল বুধবার সকালে বিপুলসংখ্যক মুসল্লির জমায়েত হয়েছে। তাঁরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে খতমে শেফা, দোয়া ও মোনাজাত করেন। স্থানীয়রা জানায়, মোনাজাতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা অন্তত ৫০ হাজার মানুষ অংশ নেন।

এদিকে গণজমায়েতের বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।

টনক নড়ে স্থানীয় প্রশাসনেরও। গণজমায়েতের বিষয়টি ঠিক হয়নি বলে জানিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। স্বাস্থ্য বিভাগের ভাষ্য মতে, এই জমায়েতে যদি কোনো প্রবাসফেরত করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি অংশ নিয়ে থাকেন তাহলে তাঁর মাধ্যমে অন্যদের মধ্যে করোনা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

জানা গেছে, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ১ মার্চ পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় একটি ইসলামী সম্মেলনে বিপুলসংখ্যক মানুষ উপস্থিত হন। সেখান থেকেই মালয়েশিয়ায় করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশেও গণজমায়েত নিষিদ্ধ করে সরকার।

গতকাল সকাল ৮টার দিকে চট্টগ্রাম আন্দরকিল্লা শাহি জামে মসজিদের খতিব ও আওলাদে রাসুল (সা.) সাইয়্যেদ মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন তাহের জাবীরি আল মাদানী মোনাজাত পরিচালনা করেন। ফজরের নামাজের আগ থেকে উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন হায়দরগঞ্জ তাহেরিয়া আরএম কামিল মাদরাসা প্রাঙ্গণে জড়ো হতে থাকেন। সূর্য উঠার আগেই মাদরাসা, ঈদগাহ প্রাঙ্গণ ও হায়দরগঞ্জ বাজার এলাকা

লোকারণ্য হয়ে ওঠে। এতে অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো কিছু সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। আনোয়ার হোসাইন তাহের জাবীরি পরিচালিত হায়দরগঞ্জ সাইয়্যেদ মঞ্জিল এই দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুফতি সাইয়্যেদ মো. তাহের ইজ্জুদ্দীন জাবেরী আল মাদানী, স্থানীয় ঈদগাহ ময়দানের খতিব সাইয়্যেদ মো. জাহেদ ইজ্জুদ্দীন জাবেরী আল মাদানী, রায়পুর পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কাজী জামসেদ কবির বাক্কী বিল্লাহ, হায়দরগঞ্জ তাহেরিয়া আরএম কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ আব্দুল আজিজ মজুমদার, হায়দরগঞ্জ মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. এ কে এম ফজলুল হক প্রমুখ।

এই দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠান নিয়ে আগের দিন মঙ্গলবার রাতে ফেসবুকে প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়। ফলে লোকজন গতকাল ভোর থেকে জড়ো হতে শুরু করেন। অনেকে হায়দরগঞ্জ তাহেরিয়া আরএম কামিল মাদরাসার মসজিদে ফজরের নামাজ আদায় করেন।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুসারে ৫০ জনের বেশি মানুষের জমায়েত নিষিদ্ধ রয়েছে। বাংলাদেশেও এটি নিষিদ্ধ। এ পর্যন্ত লক্ষ্মীপুর জেলায় ২১৪ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলা হয়েছে। এর মধ্যে ২১২ জন প্রবাসী এবং দুজন ঢাকার কারখানার শ্রমিক।

মোনাজাত পরিচালনাকারী আওলাদে রাসুল (সা.) সাইয়্যেদ মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন তাহের জাবীরি আল মাদানী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মোনাজাত-দোয়ার জন্য কোনো পূর্বঘোষিত কর্মসূচি ছিল না। আল্লাহ রোগ দেন, তিনিই আবার ক্ষমা করেন। আমরা এর থেকে মুক্তির জন্য ক্ষমা চেয়ে দোয়া ও মোনাজাত করেছি। এতে ভয়ের কিছু নেই।’

হায়দরগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক (তদন্ত) বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘দোয়ার জন্য লোকজন জড়ো হয়েছে। তবে এত বেশি সমাগম হবে তা আয়োজকরাও ভাবতে পারেননি। আয়োজনের বিষয়টি আমাদের আগে জানা ছিল না।’

রায়পুর থানার ওসি মো. তোতা মিয়া বলেন, ‘গণজমায়েতের জন্য কেউ আমাদের কাছ থেকে অনুমতি নেয়নি। পরে বিষয়টি জেনেছি। ধর্মপ্রাণ মানুষ আবেগের জায়গা থেকে জড়ো হয়ে দোয়া ও মোনাজাতে অংশ নিয়েছে।’

জেলা ইমাম-মুয়াজ্জিন সমিতির সভাপতি ও টুমচর ইসলামিয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ হারুন আল মাদানী বলেন, ‘জুমার নামাজেও হাজার হাজার মুসল্লি অংশ নেয়। আল্লাহ মানুষকে রোগবালাই দেন, তাঁর কাছে ফরিয়াদের জন্যই লোকজন জড়ো হয়েছে।’

লক্ষ্মীপুর জেলা সিভিল সার্জন আবদুল গাফ্ফার বলেন, ‘সম্প্রতি তিন হাজার ৫০ জন প্রবাসী লক্ষ্মীপুরে এসেছেন। রায়পুরের গণজমায়েতে তাঁদের অনেকে উপস্থিত থাকতে পারেন। করোনা আতঙ্ক ব্যক্তি নিয়ে এত বড় জমায়েতের প্রয়োজন ছিল না। করোনা ছোঁয়াচে রোগ। গণজমায়েতে এটি ছড়িয়ে যাবে। তাই লক্ষ্মীপুরের কোথাও যেন গণজমায়েত না হয় সে জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’

লক্ষ্মীপুর ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক আশিকুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি আমি ফেসবুকে দেখেছি। রোগ মুক্তির জন্য মসজিদের ভেতরে দোয়া ও মোনাজাত করার জন্য আমাদের নির্দেশনা রয়েছে। এত বড় জমায়েত করা ঠিক হয়নি।’

গতকাল রাত ৮টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসক অঞ্জন চন্দ্র পাল প্রশাসনের বিভিন্ন বিভাগের প্রধান এবং জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে এক জরুরি সভা করেন। সভায় হায়দারগঞ্জের গণজমায়েতের ঘটনাকে অনাকাঙ্ক্ষিত আখ্যায়িত করে ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে সে জন্য সংশ্লিষ্টদের কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়।

কালের কণ্ঠ


No comments:

Post a Comment

Surfe.be - passive income